এন্ড্রিকঃ নেক্সট সুপারস্টার নাকি আরও একজন ফ্লপ?

 



✍️ June 7, 2024

ভিনিসিয়ুস বাঁ পাশ থেকে করলেন না আর কারিকুরি। দরকারই বা কী! ডি বক্সে থাকা নয়া এক গোল শিকারীতে আস্থা রেখে মারলেন বল উড়িয়ে। কোনো ভুল নেই বছর আঠারোর তরুণ তুর্কীর। মোক্ষম এক হেডে ফার পোস্টে জড়িয়ে দিলেন বল। ব্রাজিল পেল স্বস্তির জয়। শেষ মুহুর্তের এই গোল শুধু তাদের শুধু একটা ম্যাচই বাচিয়ে দিলনা, উপহার দিল যেন ভবিষ্যতের এক নতুন আশা ভরসাও। 

নতুন এই নাম্বার নাইনের নাম এতদিনে নিশ্চয়ই শুনেছেন অনেকবারই। এন্ড্রিক ফেলিপে দে সউসা, রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যত ভাবা হচ্ছে যাকে।  আসি আসি করছিলেন অনেক দিন ধরেই, সেই পালমেইরাসে থাকার সময়ে। সেখানকার যুব দলে ১৬৯ ম্যাচে করেছিলেন মোট ১৬৫ গোল! পঞ্চম বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালে কোপা সাও পাওলো দে জুনিয়রে গোলের পর গোল করে প্রথম পান আন্তর্জাতিক পরিচিতি।

বাঁ পায়ের এন্ড্রিক কিছুটা ব্রাজিলিয়ান রোনালদো দ্য ফেনোমেনন আর পেলের মিশ্রণ। কেউ কেউ রোমারিওর সাথেও মিল খুজে পান। বল পায়ে যেমন পছন্দ করেন কাটিয়ে যেতে, তেমনই একজন শার্প শ্যুটার।    মাঠে চাপের মুখেও বল পায়ে রেখে এগিয়ে যাওয়াটা তার জীবনের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মন মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। বাবার দরিদ্রতা কাটাতে ফুটবলার হয়ে অভাব পুরণের কথা দিয়েছিলেন।          চার বছর থেকেই ফুটবলে মগ্ন এই সেনসেশনের পক্ষে সেটা খুবই সম্ভব তা বুঝে গিয়েছিলেন তার বাবা। তাই তো এন্ড্রিকের গোলের ভিডিওগুলো আপ্লোড করে যাচ্ছিলেন ইউটিউবে। 

ফলাফল, খুব দ্রুতই নজরে পড়েন ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলোর। আর্থিকভাবে সে অফার অবশ্য খুব একটা লাভজনক ছিলনা।      তবে পালমেইরাস ঠিক অফারটাই করেছিল একটা ফ্ল্যাট আর এন্ড্রিকের বাবাকে চাকরি দিয়ে। সময়টা তখন ২০১৭ সাল, অর্থাৎ বয়স তখন তাঁর সবে এগারো। 

      “আমি তাঁর খেলার একটা ভিডিও দেখি। এত ভালো লাগে যে আমি তাকে অফার করি খেলার জন্য, যে অফারে সে সাও পাওলোতে একটা আ্যপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে পারত।” পালমেইরাসের ইউথ ফুটবল কো অর্রডিনেটর জোয়াও পাওলো সাম্পাইও বলেছিলেন এই কথা। 

যুবদলে যে দুরন্ত নৈপুণ্যে দেখিয়েছিলেন, ক্লাবের সিনিয়র দলে তা টেনে নেওয়ার সুযোগ পান  ২০২২ সালে।  তিন বছরে খেলেছিলেন ৪৪ বার, লক্ষ্যভেদ ১৪ বার, গোল করিয়েছেন ১ বার। তবে সং্খ্যার বিচারে না, এই ব্রাজিলিয়ানকে দেখতে হবে খেলার ধরনে আর আত্মনিবেদনে।      তা দিয়ে জাতীয় দলেও জায়গা করে নিতে সময় নেন নি।      অভিষেক ২০২৩ সালের নভেম্বরে। বিশবকাপ বাছাইয়ে কলম্বিয়ার সাথে নেমে যান সতেরো বছর বয়সেই। সেটা একটা রেকর্ড: চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ ব্রাজিলিয়ান হিসেবে মাঠে নামা। প্রথম গোল- সেটাও একটা রেকর্ড। ফুটবলের বড় নাম ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা এই তরুণ ফুটবলার। 

বদলি নেমে নয় মিনিটের মাথায় ভিনিয়ুসের শট গোল রক্ষকের গ্লাভসে লেগে ফিরে এলে রিবাউন্ডে জালে পাঠিয়ে ম্যাচ জেতান সাম্বার দেশকে।    তা ছাড়াও ড্রিবল, পাসিং আর বল পায়ে গতিতে ছিলেন যথেষ্ট ভালো।

পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির পকেট ডায়ানামোর ভেতর আছে হাজার ফুটের দায়িত্ব বইবার ক্ষমতা।    তাই তো গত মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোলের পর ব্রাজিল কোচ দরিভাল মন্তব্য করেন, “সে যদি এই মনোভাব ধরে রাখতে পারে তাহলে ব্রাজিল আর বিশ্ব ফুটবলে সে গুরুত্বপূর্ণ এক নাম হতে চলেছে।”

আঠারোর এই টগবগে বুটার সম্ভাবনার পালে হাওয়া দিয়ে জোর গতিতে চলবেন নাকি চাপা পড়ে যাবেন তারকাখ্যাতির চাপে? গত এক যুগে এক নেইমার ছাড়া আর কোনো ভালো গোল স্কোরার পায়নি সেলেসাওরা। সেই নেইমারও তো আদতে স্ট্রাইকার না।    রোনালদো যখন ২০১১ সালে শেষ ম্যাচটা খেলে ফেললেন, তার পরে এল গেল কত নাম্বার নাইন তার হিসেব করাটাও গোলমেলে ব্যাপার। কেউই থিতু হতে পারেন নি।    বড় আশা ছিল আলেক্সান্দার পাতোকে নিয়ে। ইঞ্জুরিতে তার তো ক্যরিয়ারই শেষ হোয়ে গেল।    থিতু হচ্ছিলেন ফ্রেদ। ৩৯ ম্যাচে ১৮ গোল নিয়ে, বিশেষ করে ২০১৩ কনফেডারেশনস কাপে দারুণ খেলে মন জিতেছিলেন, তবে ২০১৪ সালের জার্মান ঝড়ের পর টিকতে পারেন নি আর। এসেছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ফ্যাবিয়ানো, রিচার্লিসনরা। সবাই শুরুতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন পায়ের জাদু দিয়ে। কিন্তু কেউই হতে পারেন নি লম্বা রেসের ঘোড়া।     তাই এন্দ্রিক কে নিয়ে উচ্ছ্বাস যেমন আছে, আছে সাথে শংকাও। 





Comments

Popular posts from this blog

দাগীঃ ডিটেইলিংয়ে অনন্য এক সিনেমা

তুফানি ওয়ান টেক শটের ব্যবচ্ছেদ

বাংলাদেশ দলে কোন পজিশনে ভালো খেলবেন হামজা চৌধুরী?