তুফানি ওয়ান টেক শটের ব্যবচ্ছেদ



তুমি কোন শহরের মাইয়া গো লাগে উড়াধুড়া! 


জ্বি হ্যাঁ, উড়াধুড়াই লাগিয়ে দিয়েছে তুফান। সিনেমা হল থেকে ওটিটি সব জায়গাতেই পাচ্ছে দর্শক বন্দনা। অনেকরকম আলোচনা হচ্ছে এই মুভি নিয়ে। এতসব হাইপের মাঝে চার মিনিটের এক ওয়ান টেক শট নজর কেড়েছে সবার।


ওয়ান টেক শট সিনেমা দুনিয়ায় স্টোরিটেলিংয়ের এক ব্যতিক্রমী নাম। একটা সিনেমা বা কোনো একটা নির্দিষ্ট দৃশ্য এমনভাবে আগাবে যে মনে হবে একটা শটেই তা শেষ হয়েছে। এডিটিংয়ের ভাষায়, কোনো কাট থাকবেনা। আল্ফ্রেড হিচককের Rope থেকে শুরু হয়ে বর্তমান সময়ে অনেক মুভিতেই ব্যবহ্রত হয়েছে এই টেকনিক। 


তবে বাংলাদেশি সিনেমায় ওয়ান টেক শট? অল্প কয়েকটাই হয়তো পাওয়া যাবে। সেই অল্প কয়েকটার একটা সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া তুফানের একটি দৃশ্য। হসপিটাল সিনে শাকিব খানের প্রবেশ থেকে সিড়ির সামনে গাড়ি ব্লাস্ট পর্যন্ত যার ব্যাপ্তি। এই শটের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়েই কথা হবে আজকে। দিকগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব পাচ পয়েন্টে।


 পয়েন্ট নাম্বার এক: camera angle

দৃশ্যের শুরুতে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল রাখা হয়েছে নায়কের পেছন থেকে। আবার গুলি করার সময় ক্যামেরা রয়েছে সামনে, অর্থাৎ দৃশ্যে নায়কের এন্ট্রইর ইম্প্যাক্ট টাও দেখা যাচ্ছে পুরোটা। দর্শক হিসেবে আপনিও যেন এই গ্যাংস্টার রেস্কিউ মিশনের অংশ হতে পারেন সেই চেষ্টা করা হয়েছে এই টেকনিক গুলো দিয়ে। ক্যামেরা অ্যাাঙ্গেল পরিবর্তনেও ছিল সৃজনশীলতা। তুফান যখন হাটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে সামনে দেখে নিচ্ছিল, তখন ক্যামেরাও সামনে চলে আসছিল। আবার হসপিটালের পিলারগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে নিচ থেকে উপর তলায় বাঁ রুম থেকে বের হতে বাঁ বিল্ডিং থেকে বের হওয়ার সময়ে শটের কন্টিনিউটি বজায় রাখতে।


পয়েন্ট নাম্বার দুই:  শাকিব খানের পারফেক্ট angry এক্সপ্রেশন

এই ওয়ান টেক শটটার আগে তুফানের ‘আব্বা’ কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আহত হওয়ায় হাস্পাতালে ছিলেন তিনি। এই খবর পেয়ে তুফান অর্থাৎ শাকিব খান উদ্ধার করতে যায় তাকে। এরকম অবস্থায় একজন৷ গ্যাংস্টার রেগে থাকবেন, চাইবেন সব ধবংস করে দিতে। খান সাহেবের এন্ট্রি থেকে ফেস এক্সপ্রেশন সব হয়েছে ঠিক সেরকমই। বিশেষ করে ক্যামেরা যখন সামনে থেকে ধরা হচ্ছিল তখন এমন পারফেক্ট এক্সপ্রেশনেরই দরকার ছিল, যেখানে তিনি পুরোপুরি সফল।


পয়েন্ট নাম্বার তিন: ডিটেইলিং

তুফান হসপিটালে ঢোকার সময় তাঁর সাথের সবাইকে হাত ইশারা করে সেখানেই থাকতে বলেন। ঢোকার সময়ে গাড়িটা ছিল হসপিটালের দিকে মুখ করে রাখা, বের হওয়ার সময়ে দেখা যায় তা যাওয়ার পথের দিকে মুখ করে রাখা। বাকিরা গাড়িটা ঘুরিয়ে রেখেছিল কারণ পুলিশ তুফানকে অত সময় নাও দিতে পারে। তুফান হাসপাতালে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলেও নেমেছেন লিফটে। কারণ, তুফানের আব্বা অর্থাৎ গাজী রাকায়েত খোড়াচ্ছিলেন যেহেতু তাঁর পায়ে গুলি লাগা ছিল। এইসব ছোটখাটো ডিটেইলস এই চার মিনিটকে করেছে আরো প্রাণবন্ত।


অনেক অনেক আকর্ষণীয় ছিল এই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। তাই এটা আমার পয়েন্ট নাম্বার চার। সাউথ বা বলিঊডের মুভিতে আমরা দেখি ম্যাস আ্যাকশন সিনগুলোয় একটা মনে রাখার মতো BGM থাকে। কেজিএফ পুষ্পা আ্যানিমেলকে রেফারেন্স হিসেবে নেওয়া তুফানেও এখানে দেওয়া হয়েছে দারূণ একটা মিউজিক যা আপনাকে দেবে goosebumps। আমার ব্যক্তিগত মতামত এই মিউজিকটাকে আলাদা ভাবে রিলিজ দেওয়া হোক ইউটিউবে যেমনটা আমরা দেখে থাকি উল্লেখিত জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রে।


last but not the least, শটের প্লেসমেন্ট নিয়ে প্রশংসা করতেই হয়। পুরো সিনেমায় তুফানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি কেউ, শুধু এসি আকরাম ছাড়া। তার ছুড়ে দেওয়া এক মোক্ষম চাল তুফানের ডান হাতকে বন্দী করা, ফলে এই গ্যাংস্টার ছিল অনেকটাই ধরাশায়ী। সেই চ্যালেঞ্জের জবাবে ঠিক এই সময়েই দরকার ছিল একটা পাল্টা জবাব। শটটার শেষে পুলিশের গাড়ি ব্লাস্ট তুফানের পাল্টা জবাবেরই একটা মেটাফোর।  


তুফানের এই এক টেকের শট বাংলা সিনেমার ভিজুয়ালাইজেশনকে এক ধাপ উপরে নিয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। আশা রাখব সব পরিচালকরাই এমন সৃজনশীল উপস্থাপনের মাধ্যমে আমাদের চোখের প্রশান্তি দেবেন।





 

Comments

Popular posts from this blog

দাগীঃ ডিটেইলিংয়ে অনন্য এক সিনেমা

বাংলাদেশ দলে কোন পজিশনে ভালো খেলবেন হামজা চৌধুরী?