দাগীঃ ডিটেইলিংয়ে অনন্য এক সিনেমা



২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা দাগী তার ডিটেইলিং দিয়ে অনন্য। সিনেমার টাইমলাইন বোঝানোর জন্য পরিচালক যেভাবে বিভিন্ন “চিহ্ন” বা ইঙ্গিত ব্যবহার করেছেন, তা দর্শকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পাশাপাশি ছিল ক্যারেক্টার বিজিএম আর শটের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার।

গল্পের সূচনা হয় ২০০৮ সালে, যার প্রমাণ বাটন ফোনের ব্যবহার। তিন বছর পর, অর্থাৎ ২০১১ সালে, নিশানের হাতে সোহাগ মারা যায়। এই সাল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে রঞ্জিত সিংয়ের একটি দৃশ্যে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকা গান “যতই বল আমায় কোকাকোলা” যা কলকাতার সিনেমা ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে থেকে নেওয়া। সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে।

এরপর, সময় এগিয়ে যায় ২০২৩-২৪ সালের দিকে। নিশান জেল থেকে ছাড়া পায় সম্ভবত ২০২৩ সালের একদম শেষ বা ২০২৪ সালের শুরুতে। তার শরীরের শীতকালীন পোশাক থেকে সময়কাল স্পষ্ট হয়। আরও ইন্টারেস্টিং হলো, বাবুর সঙ্গে চা খাওয়ার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে নিশোর নিজের সিনেমা 'সুড়ংগ' (২০২৩) এর গান “কলিজা আর জান” যা সময়কে স্পষ্টভাবে ২০২৩ সালের শেষে নিয়ে যায়।

নিশানের বাবার ক্ষমা সংক্রান্ত ডায়লগ থেকে বোঝা যায় ততদিনে ক্ষমতাশালীর পতন হয়ে গিয়েছে অর্থাৎ ২০২৪ সালের শেষভাগে চলে এসেছে। এবং সিনেমার মধ্যেও সে সময়টা পার হয়েছে নিশানের নতুন জীবনের নতুন বিপাক সৃষ্টির মাধ্যমে। আবার রবি বলে সে এমপি ইলেকশন করবে, এটা সম্ভবত নতুন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনের কথা বলেছে।

এক একটা সময়ের পরিবর্তনে চুলের কাটিং পরিবর্তন হয়েছে নিশান অর্থাৎ আফরান নিশোর। নিশানের বাবা রাজশাহীতে নতুন জীবন শুরু করার কথা বলার সময় চুল কেটে ফেলতে বলেন। এটা সবকিছু নতুন করে সূচনা করার একটা মেটাফোর। এই ছোটোছোটো চিহ্নগুলো পরিচালকের দারূণ ডিটেইলিংয়ের প্রমাণ দেয়। মজার ব্যাপার নিশান নামের অর্থ চিহ্ন। এটাও কুশলীর ডায়লগের মাধ্যমে সিনেমায় বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, লিখন চরিত্রটির জন্য ছিল আলাদা একটি বিজিএম, যা প্রতিবার তার উপস্থিতিতে বাজতো। বাংলা সিনেমায় ২০২৫ সালের ঈদের 'দাগী' ও 'বরবাদ' সিনেমার নতুন ট্রেন্ডের সূচনা করেছে এইরকম ক্যারেক্টার বিজিএমের মাধ্যমে। 

লিখন বোবা, তাই সে সাইন ল্যাংগুয়েজ ও লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে, যা নামের সাথেও মিলে যায়। “লিখন” লিখে প্রকাশ করে, আর “সাইন” মানেই তো চিহ্ন, যা আবার “নিশান” এর প্রতিরূপ। নিশান আর লিখন তাই একে অপরের পরিপুরকই হওয়ার কথা। তবে, তাদের মধ্যে সম্পর্কের পরিণতি না ঘটায় লিখনের চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে আসে। এ ব্যাপারটি সিনেমার স্যাড এন্ডিংয়ের একটা পূর্বাভাস দিয়ে দিয়েছিল হয়তো।

সিনেমাটিতে অধিকাংশ সময় ক্লোজ-আপ ও ওয়েস্ট লেভেল শট ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকে একে নাটক  নাটক বলে মনে করলেও, এটি ছিল চরিত্রগুলোর ইমোশনাল জার্নি তুলে ধরার একটা ভালো উপায়। বিশেষত নিশানের যেহেতু এটি একান্ত আবেগভিত্তিক জার্নি, তাই এই ক্যামেরা টেকনিক যথাযথ। তবে এটাও সত্যি, ওটিটিতে এই অ্যাঙ্গেল ভাল লাগলেও সিনেমা হলে কিছু দর্শকের কাছে তা একঘেয়ে মনে হতে পারে।


Comments

Popular posts from this blog

তুফানি ওয়ান টেক শটের ব্যবচ্ছেদ

বাংলাদেশ দলে কোন পজিশনে ভালো খেলবেন হামজা চৌধুরী?